
রুবেল মজুমদার।।
কুমিল্লা নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বেড়েছে বীভৎস, বিকৃত, রোমহর্ষক খুনের ঘটনা। আপনজনরাও ঘটাচ্ছে অবিশ্বাস্য খুন-খারাবি।
স্ত্রী খুন করছে স্বামীকে, মাদকের টাকা ভাগাভাগি করে বন্ধুকে খুন, ভাই খুন করছে ভাইকে,স্বামী নিয়ে প্রেমিককে খুন। খুনের পর লাশ রাখা হচ্ছে শয়নকক্ষে, রাস্তায়, বালুর ভেতর, বস্তার ভেতর, কাঁদার ভেতর, পানির ট্যাংকে, ড্রেনে কিংবা ডাস্টবিনে।
প্রায়ই এ ধরনের খুনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বই অধিকাংশ খুনের ঘটনার কারণ।
এ বছরের সর্বশেষ ছয় মাসে কুমিল্লা জেলায় ৫৫ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যাহা বিগত ২০২২ সালে ছিল ৮৩ টি খুন।
এছাড়া নানা অপরাধে মামলা হয়েছে ২৯৬০টি। বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডই ঘটেছে।
জেলা পুলিশের তথ্য মতে, এ বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় খুনের সংখ্যা ৫৫ টি। তবে পারিবারিক কলহের জেরে ৪ টি খুন হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে খুন হয়েছে ৭টি। আধিপত্য সংক্রান্ত বিরোধের জেরে খুন হয়েছে ৩টি, পূর্ব শক্রতার জেরে ১১ টি। এছাড়া পুলিশ বলছে, অজ্ঞাত কারণে খুনের সংখ্যা ৪ টি এছাড়া বাকী ২৬ টি অন্যান্য।
দৈনিক আমাদের কুমিল্লা কে কুমিল্লার বেশকয়েকজন সমাজ বিশেষজ্ঞ বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্যতম কারণ পরকীয়া, জমিসংক্রান্ত বিরোধ ও মাদকের অর্থ জোগাড়, ইন্টারনেটের অপব্যবহার. অসহিষ্ণুতা, অতিমাত্রার ক্ষোভ, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেও মানুষের মাঝে দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে নিষ্ঠুরতা। তুচ্ছ কারণে অসহিষ্ণু হয়ে খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। তবে বীভৎস বিকৃত খুনের ঘটনার বেশিরভাগই ঘটছে অপেশাদার খুনিদের মাধ্যমে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, কুমিল্লায় সর্বশেষ ছয় মাসে ৫৫ টি হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশই মামলার তদন্তনাধীন রয়েছে । এছাড়া অন্য মামলাগুলো চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘খুনের মামলাগুলো সব সময়ই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে চার্জশীট দেয়া হয়। প্রতিটি মামলায়ই বিচার দৃশ্যমান অগ্রগতি রয়েছে এবং অনেক মামলাই এখনো বিচারাধীন। আমরা চেষ্টা করছি সব মামলাগুলো গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে তদন্ত করছি।’
নারী ও শিশু কোর্টের এডভোকেট ফাহমিদা জেবিন আহমেদ বলেন, অনেক সময় আদালতে সাক্ষীদের অনিয়মিত উপস্থিতির প্রবণতা থাকায় হত্যা মামলায় বিচারকার্য ধীরগতিতে হয়। এছাড়া কিছু অসাধু তদন্ত কর্মকর্তার কারণে মামলাগুলো দীর্ঘ সময় লাগে, এতে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে অপরাধ সংকিত হয়ে আসতো।
বিশেষ করে পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ড বেশি হওয়ার কারণ সামাজিক মূল্যবোধ কমে যাওয়া। সম্পর্কগুলো আমাদের ঘর থেকেই তৈরি করতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে এসব বিষয় মোকাবেলা করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লার সভাপতি শাহ মোহাম্মাদ আলমগীর খান বলেন, পারিবারিক বিরোধ ও জমি সংক্রান্ত ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সরকার বা সমাজ কেউই ধরে রাখতে পারছে না। যার কারণে মানুষের ভোগবিলাস আর লোভের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে নেই। একটু সম্পত্তির লোভে কেউ কাউকে খুন করতেও দ্বিধা বোধ করে না।
জাহিদ/জার্নাল
[sharethis-inline-buttons]
আপনার মতামত লিখুন :