রুবেল মজুমদার ।।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র ৬ দিন বাকি। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৯ ভোটকেন্দ্র অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন ও পরবর্তী ২ দিন পর্যন্ত ভোট ও পরবর্তী সময় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আজ বুধবার পর্যন্ত পুলিশ ও এপিবিএনের সাড়ে ৩ শতাধিক সদস্যকে মাঠে নামানো হয়েছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ সংখ্যা অন্তত সাড়ে ৬ হাজারেরও অধিক হবে।
এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন আদর্শ সদর ও সদর দক্ষিণ এলাকার ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পুলিশের গোয়েন্দা ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে মঙ্গলবার এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এবার ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। দুটি উপজেলায় ২৭টি ওয়ার্ডে বিভক্ত এ সিটির এবারের ভোটকেন্দ্র ১০৫টি। অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এবার কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮৯টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ, ৯টিকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ৭টি কেন্দ্রকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশ প্রশাসন।
ইসির সময়সীমা অনুযায়ী নির্বাচনের দুদিন পরও কেন্দ্রগুলো ও এর আশপাশ এলাকায় কোন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ অপ্রীতিকর ঘটনা যেন ঘটতে না পারে, সে জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ বুধবার থেকে পুলিশ ও এপিবিএনের আরও ৫০ জন সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের মোট সংখ্যা হলো ৩৫০ জন। তারা ৪৬টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা টহল অব্যাহত রেখেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পুলিশের এসব কার্যক্রম মনিটরিং করছেন। এ ছাড়া রয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবির টহল। ভোটের দিন কিংবা এর আগে-পরে সন্ত্রাসীরা যাতে কোন ধরনের সহিংস ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে জন্য কুমিল্লা আদর্শ সদরের ৯০ জন ও সদর দক্ষিণের ২০ জনসহ ১১০ জন তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে পলিটিক্যাল ক্যাডার, অস্ত্রধারীসহ নানান অপরাধে অভিযুক্তরা এ তালিকায় রয়েছেন। সূত্র জানায়, ভোটের দিন কেন্দ্র দখলসহ কোন সহিংস ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে, সে জন্যে কেন্দ্রগুলোতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
এ ছাড়া অতি ঝুঁকিপূর্ণ প্রত্যেকটি কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স। তারা কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এ্যাকশনে যাবেন। এ ছাড়া প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন, আরআরএফ সদস্য ও আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিজিবির টহল টিম, রিজার্ভ ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবে। সব মিলিয়ে ভোটের দিনে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে ভোটকেন্দ্রসহ পুরো নগরী। মাঠে মোতায়েন থাকবে অন্তত ৬ হাজারেরও অধিক আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য। এ ছাড়াও নগরীর প্রতিটি প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে থাকবে চেকপোস্ট। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে থাকবে বুলেট প্রুপ-আরমোরেড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) ও জলকামান গাড়ি।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এম তানভীর আহমেদ মঙ্গলবার বলেন, কুমিল্লা সিটির ভোট অধিক গুরুত্ব দিয়ে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে কুমিল্লা জেলা পুলিশের বাইরেও আশপাশের জেলা থেকে আনা হচ্ছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের। এ ছাড়াও ঢাকা থেকে পর্যাপ্তসংখ্যক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও চট্টগ্রাম থেকে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ) সদস্য আনা হচ্ছে। নির্বাচনকে শঙ্কামুক্ত করতে যা যা প্রয়োজন, সেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে।
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, নির্বাচনে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হবে। এ জন্য কুসিক এলাকায় নির্বাচনের দিন র্যাবের অন্তত ২৭টিম কাজ করবে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে।
নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ইসির ট্রাইব্যুনাল গঠন ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও অপরটি নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনাল।
সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা আদালতের সদর সিনিয়র সহকারী জজকে নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও কুমিল্লা প্রথম আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে কোন প্রার্থী বা তার পক্ষে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করলে ট্রাইব্যুনাল তা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তুষ্ট না হলে আপীল ট্রাইব্যুনালে আপীল করা যাবে। এ ক্ষেত্রেও ট্রাইব্যুনালের রায়ের ৩০ দিনের মধ্যে আপীল করতে হবে। আপীল দায়েরের ১৮০ দিনের মধ্যে আপীল নিষ্পত্তি করবেন নির্বাচনী আপীল ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন,কেন্দ্র অনুযায়ী আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করব। আমাদের কাছে সব কেন্দ্রই সমান। আমরা যদি মনে করি কোন কেন্দ্রে অধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেয়া দরকার তাহলে তাই করব। সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সব ব্যবস্থাই আমরা গ্র
আপনার মতামত লিখুন :