সাইমুম ইসলাম অপি।।
পছন্দের পোশাক কমদামে কেনার সবচেয়ে সুন্দর প্ল্যাটফর্ম রাস্তার পাশের ফুটপাত। সবাই যাকে বলে গরীবের সুপার-শপ। নিম্নবিত্ত পরিবারের পোশাক পছন্দের সেরা ঠিকানা ফুটপাত। কম টাকায় যেখানে নিজের ও পরিবারের চাহিদা মেটানো যায় অনায়াসেই। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারিতে পোশাক কিনে পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন নগরীর ফুটপাত ব্যবসায়ীরা।
বড় বড় সুপার শপের অগ্নিঝড়া মূল্যের কারনে নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষগুলো সল্প খরচে পছন্দের পোশাক কিনে ফুটপাত থেকে। রোজার পূর্বের ন্যায় হচ্ছে না তেমন বেচাকেনা। তবে ১০ কিংবা ১৫ রোজার পর থেকে জমে উঠবে ফুটপাতের বেচাকেনা।
পুলিশ প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের ভয়ে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মাঝে থাকতে হয় নগরীর ফুটপাত ব্যবসায়ীদের। গত দু’বছর করোনার কারনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্তের স্বীকার হয়েছে ফুটপাত ব্যবসায়ীরা। এবার প্রত্যাশা ভালো বিক্রির যদি প্রশাসন সহায় হয়।
সল্প দামে ফুটপাত থেকে কেনা যায় পছন্দের পোশাক। ফুটপাতে পোশাকের দাম প্রতি পিস টি-শার্ট ১০০-১৫০ টাকা, শার্ট ১৫০-২০০ টাকা, প্যান্ট ২০০-৩০০ টাকা, থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট ১০০-২০০ টাকা এবং বাচ্চাদের পোশাক ২০-১৫০ টাকা।
ফুটপাত থেকে পোশাক কিনতে আসা রাসেল বলেন, রঙিন আলো ও ঝলমলে মার্কেটের পোশাকের দাম ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে না থাকায় ফুটপাত থেকে পছন্দের পোশাক কিনতে এসেছেন তিনি। তবে ঈদের কেনাকাটা নয় এসেছেন ঘরোয়া কিছু পোশাক ক্রয় করার জন্য।
বাচ্চার জন্য জামা ও প্যান্ট কিনতে আসা ফারজানা লিপি বলেন, কমদামে এখান থেকে ভালো পোশাক কিনতে পারি। বাচ্চাদের দামি পোশাকের প্রয়োজন নেই তাই ফুটপাত থেকেই তাদের জন্য কেনাকাটা করি।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলমান থাকে ফুটপাতে বেচাকেনা। রোজার কারনে শুরু হয়নি জনসমাগম তবে শীগ্রই বাড়বে ঈদের বেচাকেনা।
ফুটপাত ব্যবসায়ী ইকবাল বলেন, করোনার কারনে গত দু’বছর দোকান বন্ধ ছিল। গরু বিক্রি করে বাসায় বসে খেয়েছি। ঋণ করতে করতে খুবই খারাপ অবস্থা। করোনার পর ভেবেছিলাম ভালো বিক্রি করবো কিন্তু তাও পারছি না প্রশাসনের কারনে। প্রশাসনের কারনে আতঙ্কের মধ্যে বেচাকেনা করতে হয়।
আরেক ফুটপাত ব্যবসায়ী মঈনউদ্দীন বলেন, আজ বিক্রি খুবই খারাপ। মানুষ এখনোও বের হয়নি। আশা করি কয়েকদিন গেলে ঈদের বেচাকেনা শুরু হবে। ঈদের স্পেশাল কালেকশান আছে কিনা জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ঈদের কোনো আলাদা পোশাক আমরা আনি না। রেগুলার পোশাকগুলোই আমরা বিক্রি করি।
আরেক ফুটপাত ব্যবসায়ী ইমরান বলেন, বেচাকেনা কি করবো উঠা বসার মধ্যে আছি। কখনো প্রশাসন আবার কখনো সিটি কর্পোরেশন। জেলখানায় প্রায়ই যাওয়া হয়। সকালে গেলে রাতে খেয়েদেয়ে চলে আসি। আর্থিকভাবে দুর্বলদের কেউ সহায়তা করে না। নদীর পাড়ে বাড়ি থাকলে সর্বদাই বিপদ।
আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, বেচাকেনা প্রশাসনের হাতে। তারা সুযোগ দিলে বিক্রি করতে পারবো না হলে বিক্রি বন্ধ। সংসার চালানোর মতো উপার্জন হয় না। মানুষের কাছে টাকা কম, বিক্রি আল্লাহর হাতে। আশা করছি এবার ভালো হবে। তবে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের দু’বছরের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে না।
নিম্ন আয়ের মানুষদের একমাত্র ভরসা এই ফুটপাত। পরিবারকে নিয়ে ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্ন বুনা এই মানুষগুলোর চাহিদা খুবই সামন্য। প্রশাসন ও কুমিল্লা ৬ আসনের সাংসদ হাজী আকম বাহাউদ্দীন বাহার এমপি মহোদয়ের কাছে তাদের চাওয়া কেবল বেচাকেনা করার মত একটি সুনির্দিষ্ট ও বৈধ জায়গা। যার মাধ্যমে হাসি ফুটবে ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী পরিবারের।
আপনার মতামত লিখুন :