ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে হলের অতিথিকক্ষে মানসিক ও শারীরিক পীড়নের ঘটনায় ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে হল থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করেছে হল প্রশাসন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নির্যাতন-নিগ্রহের বহু অভিযোগ উঠলেও খুব কম ক্ষেত্রে বিচার বা প্রতিকার হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আসনসংখ্যা সীমিত। অনেকেই হলে আসন পান না। এই সুযোগে সরকার-সমর্থক ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতা দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার শর্তে নতুন শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন আবাসিক হলে থাকার ব্যবস্থা করেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের জায়গা হয় হলের গেস্টরুমে। কোনো শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ না দিলে তাঁকে শাস্তি পেতে হয়। এ বিষয়ে কোনো কৈফিয়তও মানতে চান না ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। গত ২৬ জানুয়ারি রাতে বিজয় একাত্তর হলের গেস্টরুমে (অতিথিকক্ষে) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আকতারুল ইসলামকে মানসিক ও শারীরিক পীড়ন করেন ছাত্রলীগের হল শাখার নেতা-কর্মীরা। এতে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ওই সংগঠনের ছয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তদন্ত কমিটি তিনজনের দোষ খুঁজে পায় এবং ছয় মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে প্রায়ই সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিগ্রহের শিকার হলেও অভিযোগ করতে সাহস পান না। তাঁরা মনে করেন, হলে থাকতে হলে ‘বড় ভাইয়ের’ আদেশ-নির্দেশ মেনে চলতে হবে। যদিও ছাত্রলীগের নেতারা আবাসিক হলে গেস্টরুমে নির্যাতন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের তাঁদের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করার অভিযোগ স্বীকারই করতে চান না। তাঁদের দাবি, শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় তাঁদের কর্মসূচিতে অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা যদি স্বেচ্ছায় কর্মসূচিতে যেতে আগ্রহী থাকেন, তাহলে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে শাস্তি দেওয়ার নামে নির্যাতন করা কেন?
আবাসিক হলের আসন বরাদ্দ কিংবা ডাইনিং হলের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো সংগঠনের কিছু করণীয় নেই। এসব দেখভাল করা সম্পূর্ণ হল প্রশাসনের দায়িত্ব। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে কয়েক মাস আগে খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তঁাদের পছন্দসই ব্যক্তিকে লালন শাহ হলের ডাইনিং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার জন্য হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সেলিম হোসেনকে মানসিক চাপ দেন ও লাঞ্ছিত করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর তিনি মারা যান। সেই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে চিরতরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।
বিজ্ঞাপন
বিজয় একাত্তর হল প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মাধ্যমে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির যেসব নেতা-কর্মী ধরাকে সরা জ্ঞান করেন, তাঁরা কিছুটা হলেও সমঝে চলবেন। সেই সঙ্গে হল প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে যে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে যেন কেউ হয়রানি বা নির্যাতন করতে না পারে। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন কঠোর হলে আবাসিক হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা কঠিন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ‘সব ছাত্রকেই সমান চোখে দেখা হয়।’ এটা শুধু মুখে বললে হবে না, কাজেও প্রমাণ করতে হবে। সব ছাত্রকে সমান চোখে দেখা হলে বিরোধী দলের সমর্থক ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তঁাদেরও আবাসিক হলে থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধ করতে হবে নির্যাতনমূলক গেস্টরুম সংস্কৃতি।
আপনার মতামত লিখুন :