নিউজ ডেস্ক।।
মোহাম্মদ আশরাফুলের দৃষ্টিনন্দন ফ্লিক কিংবা আফতাব আহমেদের ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড অন দিয়ে ছক্কা উড়ানোর স্মৃতি বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের হৃদয়ে এখনও তরতাজা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মাটিতে নামিয়ে এনে প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত জয় পায় মোহাম্মদ আশরাফুলের দল।
জোহানেসরবার্গের গ্যালারি ছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। আর মাঠের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ছিল সর্বসেরা। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শুরুটা যে আতিশজ্যে হয়েছিল, ২২ গজে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছিল, গর্ব নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো পরাশক্তিকে হারিয়েছিল, তার কিছুই টিকিয়ে রাখতে পারেনি পরবর্তীতে। শুধু ওই বিশ্বকাপ কেন, ২০০৯, ২০১০, ২০১২, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২১; প্রতিটি বিশ্বকাপ যেন বাংলাদেশের কাছে হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাসের।
বিশ্বকাপের মূলপর্বে সেটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম জয়। এরপর ছয়টি আসরের প্রতিটির মূলপর্বে খেললেও কোনো জয় নেই। দ্বিতীয় জয় পেতে আর কতো অপেক্ষা? কেন পারিনি? সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রথম জয়ের নায়ক (২৭ বলে ৬১) আশরাফুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেছেন, ‘আমরা আসলে পরবর্তীতে আর টি-টোয়েন্টি খেলাটা আয়ত্ত করতে পারিনি। মডার্ন ক্রিকেট যেভাবে এগিয়েছে আমরা সেই তালের সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারিনি। এখন পরিস্থিতি তো আরও কয়েকধাপ এগিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ আগের জায়গাতেই আছে।’
রাত পোহালেই অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। বাছাইপর্ব পেরিয়ে ওঠা নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশকে না হারানোর কোনো কারণ দেখে না। সংবাদ সম্মেলনে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান টম কুপার রীতিমত হুমকিই দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশকে। অথচ সাকিবের সংবাদ সম্মেলন ছিল নিজেদের অস্বিত্ব খুঁজে পাওয়ার লড়াই। টানা হারে ক্লান্ত বাংলাদেশের পায়ের নিচের জমিন চোরাবালির মতো।
ভাগ্য সহায়ক বলে এবার সরাসরি মূলপর্বে খেলছে বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে যেরকম নাটকীয়তা, উত্তেজনা ও উদার পারফরম্যান্স দেখা গেছে তাতে মূলপর্বে ওঠা হতো কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। বাংলাদেশ আপাতত বিশ্বকাপে ‘দ্বিতীয়’ জয়ের অপেক্ষাতে। চৌদ্দ বছরের লম্বা সময়ে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে। একাধিক খেলোয়াড় এসেছেন, একাধিক খেলোয়াড় হারিয়েও গেছেন। টিকে গেছেন কেবল সাকিব আল হাসান। প্রতিটি বিশ্বকাপ খেলা এ খেলোয়াড়ই বাংলাদেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যপথে নিয়ে যেতে পারবে বলে বিশ্বাস আশরাফুলের, ‘সাকিব শুধু অভিজ্ঞতাতেই বড় না। ওর মাঠের উপস্থিতি আমাদের জন্য, প্রতিপক্ষের জন্য ইমপ্যাক্টফুল। নিশ্চিত করে বলতে পারি, সাকিব ফুরফুরে মেজাজে, চাপ নিয়ে না খেললে নেদারল্যান্ডস দাঁড়াতেই পারবে না।’
প্রসঙ্গত, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রতিটি আসর খেলেছেন কেবল রোহিত শর্মা ও সাকিব আল হাসান।
নেদারল্যান্ডস যে হুমকি দিয়েছে তাতে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। ২০১০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ঘরের মাঠে ২০১৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে হংকংয়ের কাছেও পরাজয়ের তেতো স্বাদ গ্রহণ করতে হয়েছিল। ফলে ২৪০ বলের এই খেলায় বাংলাদেশের ওপর ভরসা করা কঠিন বলেই মনে করেন সমর্থকরা। নিজেদের দিনে সেরা। কিন্তু প্রতিপক্ষের সাজানো মঞ্চ চূর্ণবিচূর্ণ করে জয় ছিনিয়ে আনার কাজটা করতে পারে না। পারে না বলেই বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স স্রেফ ধূসর। অংশগ্রহণেই যেন টিকে আছে গৌরব!
ম্যাচের আগে দলের প্রতিনিধিরা কথার খেলায় মেতে উঠেন, শব্দের মেলায় প্রতিপক্ষকে বার্তা দিয়ে রাখেন। প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে চাপে রাখতে এ-টা ও-টা বলে দ্বিধার জন্ম দেয়, সংশয় বাড়ান। অথচ বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান আজ হোবার্টে গণমাধ্যমকেই নিজের প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেললেন। প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্নে মিশে ছিল অসহিষ্ণু ও অসম্মানপূর্ণ আচরণ।
পরীক্ষিত ও ইনফর্ম লিটনকে ওপেনিং পজিশন থেকে সরিয়ে বেশ আলোচনার জন্ম দিচ্ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। অথচ গণমাধ্যমে দলের ভাবনা নিয়ে কোনো কথাই বলছিলেন না কেউ। শান্ত, সৌম্য, মিরাজ, সাব্বির সবাইকেই চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু কেউই থিতু হতে পারেননি। তাইতো ইনিংস উদ্বোধনে লিটনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা যাচ্ছে বেশ।
প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন ছিল, ‘ওপেনারদের মধ্যে কেবল লিটনের একাধিক ফিফটি বা ৪০ প্লাস রান আছে। কিন্তু ওপেনিং থেকে সরিয়ে লিটনকে অন্য জায়গায় ভাবা হচ্ছে। কোন চিন্তা থেকে এটা করা হচ্ছে বা বিশ্বকাপেও এই চিন্তা থাকবে কিনা?’
চক্ষণ সাকিব রয়ে-সয়ে প্রশ্ন শুনলেও পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেছেন, ‘এখন আপনার কি মনে হয় লিটন ওপেন করলেই আমরা জিতবো কিংবা ওপেনার ঠিক হয়ে গেলেই আমরা জিতবো?’
প্রশ্নকর্তা যথাযথ উত্তর না পাওয়ায় আবার জানতে চান, ‘অন্যরা ভালো করছেন না। কিন্তু যিনি ভালো করছিলেন, তার পজিশনটাই চূড়ান্ত হচ্ছে না।’ উত্তরে সাকিব উপহাসের হাসি হেসে বললেন, ‘আপনি যেভাবে বলছেন, সেভাবে আসলে ডিসিশন মেকারের জায়গাতে আপনাকে রাখতে হবে।’
বুঝে, না বুঝে উত্তরে, প্রতি উত্তরে সাকিবের এই আক্রমণাত্মক মনোভাব কতটা মাঠের ক্রিকেটে ফুটে ওঠে সেটাই দেখার। ২০০৭ সালে প্রথম জয়ের সাক্ষী ছিলেন তিনি। তার হাত ধরে চৌদ্দ বছর পর ‘দ্বিতীয়’ জয় আসে কিনা সেটাই দেখার।
আপনার মতামত লিখুন :