মু. শরীফ উদ্দিন।
কুমিল্লার বরুড়ায় কচুর লতি চাষ করে কৃষকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বরুড়ার কচুর লতি যাচ্ছে আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
উপজেলার চাহিদার তুলনায় লতি বেশি উৎপাদন হচ্ছে। লতি বিক্রিতে প্রতি সপ্তাহে নগদ টাকা পেয়ে খুশি এলাকার কৃষকরা। দিন দিন ওই এলাকায় লতি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কৃষকদের দাবি এলাকায় একটি প্রসেসিং সেন্টার হলে লতি দুই তিন দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।
বরুড়া উপজেলায় ২৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে কচুর লতি। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ২৫ মেট্রিক টন লতি, বছরে সাত থেকে আট মাস লতি তোলা যায়। গড়ে মূল্য দাঁড়ায় ৫০ কোটি টাকার মতো। বরুড়া ছাড়া, আদর্শ সদর, চান্দিনা ও বুড়িচংয়ের উল্লেখযোগ্য জমিতে কচুর লতি চাষ হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায় বরুড়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে ঘরে লতি তোলা, পরিষ্কার, বাঁধাইয়ের উৎসব। পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত লতি চাষ নিয়ে। নরিন্দ গ্রামে পুরুষরা জমি থেকে লতি তুলে বাড়ি আনছেন। ঘরের সামনে নারীরা লতি পরিষ্কার করছেন। অন্য পরিবারের নারীরাও তাদের সহযোগিতা করছেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে উপজেলার রাজাপুর, জালগাঁও, বাতাইছড়ি, শরাফতি, পদুয়া ও হরিপুরে। এখানে প্রতিদিন ৪০ মেট্রিক টনের বেশি লতি সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। গ্রামের এক স্থানে লতি জড়ো করা হয়। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যানে লতি চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ফাতেমা আক্তার নামের এক তরুণী জানান তিনি প্রতিবেশীর লতি পরিষ্কারে সহযোগিতা করছেন। তারা প্রতি কেজি লতিতে এক টাকা করে পাচ্ছেন। তিনি দিনে ১০০ থেকে দেড়শ’ কেজি লতি পরিষ্কার করতে পারেন।
নরিন্দ গ্রামের চাষি আলী মিয়া বলেন,তাদের এলাকায় শত বছর ধরে লতির চাষ হচ্ছে। তবে কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষ বেড়েছে। ধান চাষে মৌসুম শেষে টাকা পান। লতি চাষে প্রতি সপ্তাহে টাকা পাচ্ছেন। তাই তিনি লতি চাষে মনোযোগ দিয়েছেন।
শালুকিয়া এলাকার পাইকারি লতি ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, তারা কয়েকজন মিলে লতি সংগ্রহ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেন।
ভবানীপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার ভূঁইয়া বলেন, লতি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ,বিনামূল্যে সার বীজ দিয়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া বিষমুক্ত লতি উৎপাদনে সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ দেয়া হচ্ছে। এদিকে সবাই একদিনে লতি তুলে যেন ক্রেতা সংকটে না পড়েন তাই তাদের রোটেশন করে দেয়া হয়েছে।
ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.খলিলুর রহমান বলেন, এই ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের প্রায় সব কয়টিতে লতি উৎপন্ন হয়। লতি উৎপন্ন করে কৃষকরা ভালো আয় করেন।
বরুড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বরুড়ার লতির সুনাম দেশজুড়ে। এই উপজেলার ভবানীপুর ও আগানগরে বেশি লতি উৎপন্ন হয়। এই অঞ্চলে দিন দিন লতির চাষ বাড়ছে। এখানে একটি লতি প্রসেসিং সেন্টারের দাবি কৃষকদের। এবিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে আরও জানা যায় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পানি কচু ও লতি রপ্তানি হচ্ছে। আমেরিকা, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও মধ্যপ্রাচ্যের সকল দেশে পানি কচু ও লতি রপ্তানি হয়। সব মিলিয়ে ২৫/২৬টি দেশে লতি রপ্তানি হয়।
আপনার মতামত লিখুন :