স্টাফ রিপোর্টার।।
কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে ছাত্রলীগের কুমিল্লা জেলা দক্ষিণের নতুন সেই কমিটিতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ভঙ্গের প্রচেষ্টার জোর গুঞ্জন উঠেছে। জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের মদদে কমিটিতে একাধিক বিবাহিতসহ কোনও কোনও প্রার্থীর বয়স জালিয়াতিরও অভিযোগ উঠেছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদসহ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতার জন্য জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন কর্মীরা। দু একদিনের মধ্যেই নতুন কমিটি ঘোষণাও দেয়া হবে বলে খবর মিলেছে।
কুমিল্লা জেলা দক্ষিন ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১৫ সালে। দীর্ঘ সাত বছর পর ২০২২ সালে সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। সর্বশেষ গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জেলা ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সেখানে প্রার্থিতা করেন মোট ৪৩ জন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, গেলো সপ্তাহে কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং মুজিবুল হক স্বাক্ষরিত জেলা আওয়ামী লীগের প্যাডে দুই ছাত্রনেতার নাম উল্লেখ করে তাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এর নিকট প্রেরণ করা হয়।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মনোনীত ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত মিনহাদুল ইসলাম ওরফে রাফি বিবাহিত। যাহার বিবাহের প্রমাণপত্র স্বরূপ কাবিননামা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এছাড়া যে সকল প্রার্থীরা পদ বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন, কাবিননামার সেই কপি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নিকট ইতোমধ্যেই পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রাফির সেই কাবিননামায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের ভাতিজা ও লালমাই উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শাহীনের স্বাক্ষর।
সভাপতি পদে আরেক প্রার্থী এম রুবেলে হোসেন যার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মসাল – ২৫-১০-১৯৯২ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৯ থাকলেও তার বয়স ত্রিশ উর্ধ্বে যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থী।
এছাড়া সভাপতি পদে আরেক প্রার্থী মূসা খানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে,মূসা খানের বাবা নজরুল ইসলাম বিএনপির প্রভাবশালী নেতা।
এছাড়াও একই পদ প্রত্যাশী অপর এক প্রার্থী ইসমাইল হোসেন মোল্লাও বিবাহিত। জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ ০২-০১-১৯৮৯ ( বর্তমানে ৩৪ বছর বয়স), বর্তমানে তিনি ২ সন্তানের জনক। স্ত্রী জেসমিন আক্তার কলি, পেশায় একজন শিক্ষিকা (লাকসাম গনউদ্দোগ হাই স্কুল)
আরেকজন ইসরাফিল পিয়াস বর্তমানে নিমসার কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। তার চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যার কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ শাখার আসন্ন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী কাজী শিহাব শুভ, মুলত পেশায় তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের একজন ঠিকাদার। মেসার্স শিহাব এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন তিনি। দলীয় পদ পদবী পেতে তিনি নিজেও ভেঙেছেন সংগঠনটির গঠনতন্ত্র।
জেলায় কোথাও দলীয় কোন পদ পদবী না থাকলেও শিহাব শুভ সিভিতে বিভিন্ন সময়ের দলীয় পদ উল্লেখ করেছেন, যা সম্পুর্ন ভুয়া। এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাথে যা প্রতারণার সামিল।
এ বিষয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ মাহমুদ বলেন, বিবাহিত কিংবা বয়সোর্ধব যেই হোক না কেন কমিটিতে আসার নিয়ম নেই। তবে বয়সের বেপারটি যদি এমন হয় যে করোনার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে কমিটি হতে বিলম্ব হচ্ছে তখন কেন্দ্রীয় কমিটির পরামর্শক্রমে বিবেচনাধীন রাখতে পারেন। তবে ছাত্রলীগে নিয়মের বাইরে গিয়ে বিতর্কে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :