• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
সর্বশেষ আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
Designed by Nagorikit.com

বিমানবন্দরে প্রবাসীরা যেন হয়রানির শিকার না হন: প্রধানমন্ত্রী

কুমিল্লা জার্নাল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের প্রায় এক কোটির মতো প্রবাসী আছে। তারা বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে আসেন। তারা এসে যেন বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার না হন। তাদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সব সেবা ডিজিটালাইজ করে ফেললে বিষয়টি আরও সহজ হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকা মূল্যের স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করার পাশাপাশি উদ্বোধন খাম উন্মোচন এবং শুভেচ্ছা স্মারক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ভাবমূর্তির কথা ভেবে বিমানের যাত্রী সেবার মান বাড়াতে হবে। প্রবাসীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। কারণ তারা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে এবং তাদের কল্যাণে রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার। করোনার সময়ে বিমান ভালো সেবা দিয়েছে। তবে প্রবাসীদের প্রতি আরও যত্নবান হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশ উন্নত হচ্ছে, মানুষ সাবলম্বী হচ্ছে। আমাদের যাত্রীসেবা যত উন্নত করতে পারব, ততই দেশের লাভ হবে। দেশের মানুষের লাভ হবে এবং দেশটাও আরও উন্নত হবে।

বিমান প্রতিষ্ঠার পটভূমি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব পেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তার নির্দেশে-পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ‘৭২ সালে। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি যাত্রা শুরু করেন। এই ভূ-খণ্ড একটি প্রদেশ ছিল পাকিস্তানের, তাকে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রে রূপ দেওয়া। যে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল, আইন করা প্রয়োজন ছিল, নিয়ম-নীতিমালা-বিধিমালা প্রয়োজন ছিল, সবই তিনি অল্প সময়ের মধ্যে করেন। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের একটি সংবিধানও উপহার দেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিনি বিমান প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যান।

তিনি বলেন, আমাদের আসলে কিছুই ছিল না। বন্ধুপ্রতীম দেশের কাছ থেকে কয়েকটি জাহাজ নিয়ে এসে তিনি বিমান চালু করেন। প্রথমে ঢাকা-যশোর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-কক্সবাজার অভ্যন্তরীণ রুট। এরপর ঢাকা থেকে লন্ডন পর্যন্ত যাত্রী নেওয়া—এ সবই কিন্তু তার আমলে হয়েছে। পরবর্তীতে ব্যাংকক, কাঠমান্ডু, দুবাই আন্তর্জাতিক রুটগুলো চালু করা হয়। বিমানের জন্য আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণকেন্দ্র সেটাও তিনি প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যান। মাত্র সাড়ে ৩ বছর। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রকৃতপক্ষে আমরা যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যে স্বকীয়তা আছে, একটা মর্যাদা আছে, সেই আদর্শ থেকে বাংলাদেশ অনেকটা বিচ্যুত হয়ে যায়। সে জন্য কোনো ক্ষেত্রেই উন্নয়নের তেমন অগ্রযাত্রা দেখা যায়নি।

সরকারপ্রধান বলেন, সব সময় আমি যখনই বাইরে গেছি, সব সময় লক্ষ্য ছিল নিজেদের বিমান ব্যবহার করব। আমার অভিজ্ঞতা আছে বিমানের কী বিধ্বস্ত অবস্থা ছিল। ৯৬ সালে যখন আমরা সরকার গঠন করি, যদিও তখন আর্থিকভাবে খুব সীমাবন্ধতা ছিল, তার মাঝেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম বিমানের উন্নয়ন করা। মাত্র ৫ বছর হাতে সময়, ঠিক ততটা কাজ করে যেতে পারিনি। দ্বিতীয়বার আমি যখন সরকারে আসি ২০০৮ এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে। ২০০৯ এ তখন আমরা লক্ষ্য করি, নিউইয়র্ক, ব্রাসেলস, প্যারিস, মুম্বাই এবং ইয়াঙ্গুন রুটে যে বিমান চলাচল করতো সেগুলো সব লোকসান দেয়। সেগুলো একে একে সব বন্ধই করে দিতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এই যে জরাজীর্ণ বিমান, বিমানে যখন চড়তাম সেখানে গানও শোনা যেত না। জানালার পাশের সিটে বসলে ঝরঝর করে পানিও পড়ত। কোনোমতে কাপড় দিয়ে সেই পানি বন্ধ করা হতো। এমনই আমাদের বিমানের দুর্দশা ছিল। আমি পাইলটদের সব সময় ধন্যবাদ জানাতাম, এ ধরনের ঝরঝরে অবস্থায় সাহস করে তারা যে বিমান চালাচ্ছে, একেকটা এয়ারক্র্যাফট চালাচ্ছে সেটাই বড় জিনিস ছিল।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯-এ সরকারে আসার পর আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিই কীভাবে বিমানকে আরও শক্তিশালী করতে পারি, সেবা বৃদ্ধি করতে পারি এবং মানুষের কাছে নিই। ঢাকা আমাদের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছিল। একটা স্বাধীন দেশে কেন একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকবে! তাই সিলেট এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আমরা তৈরি করি। সেখান থেকে সরাসরি যাতে বিদেশে যেতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছিলাম। বরিশাল, রাজশাহী, সৈয়দ বিমানবন্দর এগুলো সবই বিএনপি-জামায়াত ২০০১-এ সরকারে এসে বন্ধ করে দেয়। সেখানে কোনো যাত্রীসেবা ছিল না। সেগুলো আমরা আবার চালু করি। সেই সঙ্গে সঙ্গে বিমান বহরে নতুন নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করি। বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ নিয়ে বিমান চলছে।

বিমানকে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এবং দক্ষ জনবল দিয়ে অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭-এর সি চেক কার্যক্রম এবার আমরাই করতে শুরু করেছি। অর্থাৎ বিমানই করছে। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিমান সফলভাবে কাজগুলো করতে পারল। তাতে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। প্রযুক্তি শেখায় আমাদের আরও মনোযোগ দিতে হবে। যেন আমাদের আর অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে থাকতে না হয়।

গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য আলাদা ইউনিট করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের অবস্থা এক সময় খুব খারাপ ছিল। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য আমরা আলাদা ইউনিট করতে চাই। যত দ্রত সম্ভব এটা করা দরকার। যাত্রীসেবাটা যাতে আরও উন্নতমানের হয় আমরা সেটাই করতে চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন যেসব বিমান আমরা কিনেছি সেখানে ওয়াইফাই আছে। সেখানে বসে অনেক কাজ করা যেতে পারে। ইনফ্লাইট বিনোদন সেবা অনেক উন্নত মানের হয়েছে। আধুনিক যুগে মানুষ কোথাও বসে থাকতে চায় না। তাদের নিজের কিছু কাজ করতে হয়। সেই কাজ করার সুযোগ আমরা যে নতুন বিমানগুলো কিনেছি, সেখানে সেই সুবিধাটা আছে। বিমানে খাবার-দাবার ভালো দেয়, একটু বেশিই দেয়। আমি বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইনে চড়েছি, ঘুরেছি, দেখেছি। সেখানে এত সেবা পরিবেশ করা হয় না, যেটা বিমান করে। আমাদের যাত্রীসেবাটা যাতে আরও উন্নত হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে।

আরও পড়ুন

  • জাতীয় এর আরও খবর