স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার বুড়িচংয়ে বাকশীমূল ইউপির খারেরা পূর্বপাড়ার আৎকা (হঠাৎ) পীরের বাড়ির আঙ্গিনায় আকস্মিক মাজার গড়ে তোলায় এলাকায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নানা রকম জল্পনা কল্পনা আর বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে এলাকাবাসীর কাছ থেকে।
এলজিআরডি প্রকৌশলী মরহুম সিদ্দিকুর রহমান ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বরে স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার লাশ বাকশীমূল ইউনিয়নের ফকিরবাজার সংলগ্ন পুকুরের পশ্চিমপাড়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফনও করা হয়। প্রায় ১৭ বছর পর গতকাল ১৭ মার্চ বৃহস্পতিবার রাতে খারেরা গ্রামের নিবাসী সাবেক প্রকৌশলী মৃত সিদ্দিকুরের ছেলে শাহীন জালালী পিতার কঙ্কাল কবর থেকে তুলে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে তার বাড়ির আঙ্গিনায় দাফন করেন। রাতারাতি পাকা দেয়াল তুলে মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখে মাজারও বানিয়ে ফেলেন। মাজার স্থাপনের দৃশ্য দেখে বিষয়টি জানাজানি হয়। এতেই এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, মৃত সিদ্দিকুর রহমান এলজিডির একজন প্রকৌশলী ছিলেন। আর ছেলে শাহীন জালালী হঠাৎই নিজেকে একজর পীর বলেও দাবী করছেন।
বাকশিমুলের খারেরা গ্রমে গিয়ে দেখা যায়, কবরের চারপাশ ইট দিয়ে উচু দেয়াল তৈরি করে মাজারের নমুনা করে রেখেছেন এবং তাতে জ্বলছে মোমবাতি। কবরের পাশে একটি বড় স্পিকারও রয়েছে।
এলাকাবাসী একপ্রকার অভিযোগ করেই জানায়, প্রশাসন ও এলাকাবাসীকে না জানিয়ে কবর থেকে লাশ উত্তলন করেছে। অত্র এলাকায় আগে কোন মাজার ছিল না। রাতারাতি মাজার স্থাপন করার অপচেষ্টা ভন্ডামী ছাড়া আর কিছুই নয়। মাজারের নামে যেন কোন প্রকার ভন্ডামী বা অশ্লীলতা সৃষ্টি হতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতাও কামনা করেন তারা।
মোঃ শাহীন জালালী নিজেকে জালালীয়া দরবার শরীফের খেলাফত প্রাপ্ত পীর দাবী করে জানান, ❝বাবা সিদ্দিকুর রহমান মৃত্যুর আগে ওসিয়ত করে গেছিলেন তার লাশ যেনো বাড়ির আঙ্গিনায় নিজ জায়গায়, মায়ের পাশে দাফন করার জন্য। কিন্তু আমার ভাইয়েরা বাবার ওসিয়ত মানে নাই। যে জায়গাতে দাফন করা হয়েছিল সে স্থানটা আমাদের পারিবারিক কবরস্থান না। সেটা সামাজিক কবরস্থান। মাজার বিষয়ে তিনি বলেন, এইটা মাজার না এখানে একটি ড্রেন আছে তাই কবরের সু-রক্ষার জন্য ইটের দেয়াল স্থাপন করেছি।❞
পীর শাহীন জালালীর মুরিদ, আনন্দপুর গ্রামের শাকিল জানান, আমরা বাবাজান থেকে শুনেছি, লাশ তুলে বাড়ির পাশে কবর দেওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখাইছে।
এ বিষয়ে ফকিরবাজার ইসলামিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মোঃ আবুল বাশার বলেন, আল্লাহ্ অলি বা বুজুর্গ ব্যক্তি কবর ছাড়া মাজারের নমুনা করা ঠিক হবে না। আমার জানামতে সিদ্দিকুর রহমান কোনো আল্লাহ অলি বা বুজুর্গ লোক ছিলো না।
এ বিষয়ে বুড়িচং দরবার শরীফের পীর সাহেব আব্দুল হালিম বলেন, সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টা দেখতে হবে এবং জেনে আমি মন্তব্য করতে পারবো, না হয় মুফতিদের কাছ থেকে জেনে বলা যাবে। বাকশীমূল কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও মসজিদের খতিব ও বাকশীমূল ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল হযরত মাওলানা মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, এতো বছর পরে লাশের কঙ্কাল তুলে মাজার তৈরি করা এগুলো ভন্ডদের কাজ।
খারেরা গ্রামের যুবলীগের নেতা এম এ কাইয়ুম বলেন, এখানে কোনো মাজার করা হয়নি বাবার ওসিয়ত তার ছেলে পালন করেছে।
বুড়িচং সদর সার্কেল সোহান সরকার, বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার হালিমা খাতুন ও বুড়িচং থানার ওসি আলমগীর হোসেন অবগত হয়েছেন জানিয়ে থানার এসআই বিনোদ দস্তিদার বলেন, ❝দেখে শুনে একটি রির্পোট তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছি। ওসি স্যার উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।❞
আপনার মতামত লিখুন :