মোস্তাফিজুর রহমান।।
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে খাল ভরাট ও সড়কের পাশে ময়লার স্তূপ দিন দিন বাড়ছে। এতে দূষিত হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ। আবর্জনার দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস পথচারীসহ ওই এলাকার মানুষ।কোথাও রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট করা হচ্ছে।কোথাও রাস্তার পিচের উপর আবার ব্রিজের নিচে রাখা হচ্ছে ময়লা। আবর্জনার উৎকট গন্ধে যাতায়াতকারীরা নাক চেপে পথ চলছেন। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,জেলার বুড়িচং সদরের আরাগ রাস্তার মাথা ৯০ দশক থেকে প্রায় ১০০ শত বছর পূর্বে এটি নৌকার ঘাট ছিল। দেশের দূরদুরান্ত থেকে এসে মাঝিরা নৌকা নোঙ্গর করে তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পাদন করতো। কিন্তু কালক্রমে বিস্তৃত নৌকাঘাট দূরের কথা, বাজারের ময়লা ফেলে এক সময়ের বয়ে চলা খাল অতিসত্তর সঙ্কটে ভুগছে। বুড়িচং সদর বাজারের পশ্চিম পাশের তিথিখাল যা দীর্ঘদিনের ময়লা আবর্জনার স্তুপের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে আছে এবং খালের অধিকাংশ স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে আছে।দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তিথিখাল ও কোসাইল্লা খাল এবং ভারত সংলগ্ন বাকশীমূল ইউনিয়নের ফকির বাজার এলাকা দিয়ে পাগলী নদী নামে ও একটি নদী এসে পয়াতের জলায় যুক্ত হয়ে স্থানীয় ঘুংঘুর নদী ও পরবর্তীতে সালদা নদীতে গিয়ে মিশেছে।এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার জরইন, হরিপুর, বাকশীমূল,ষোলনল খাড়াতাইয়া গাজীপুর,পীরযাত্রাপুরসহ অন্যান্য এলাকার ছোট-বড় খালগুলো পর্যায়ক্রমে প্রভাবশালীদের দখলে যাচ্ছে। সরকারি খাল দখল করে অবৈধভাবে বাড়িঘর, দোকানপাটসহ পাকা স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসব বুড়িচংয়ে।স্থানীয় অনেকে জানান, যারা এই খাল দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করছে তারা এখন মনে করছেন তাদের বিরোদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে না।স্থানীয়দের অভিযোগ সূত্র জানা যায়,বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প, বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পয়াতের জলাখাল পুনঃখনন কার্যক্রম হরিপুর, বাকশীমূল, আগানগর ও বুড়িচং বাজার অংশসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান খনন না করেই বিভিন্ন স্থানে খালের সম্মুখভাগে খাল খনন কার্যক্রমের সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে।আর খননের অনেক স্থানেই এখন ভরাট হয়ে যাচ্ছে।ব্রিজ ও কালভার্টগুলো খাল ও নালার ওপর অবস্থান করার শেষ চিহ্ন হিসেবে টিকে আছে, যা দেখলে বোঝা যায় এখান দিয়ে একসময় খাল ও নালা ছিল এবং এতে পানি প্রবাহিত হতো।
বুড়িচং সদর বাজারের পশ্চিম পাশের তিথি খাল যা দীর্ঘদিনের ময়লা আবর্জনার স্তুপের কারণে পানির প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় বিষয়টি বুড়িচং উপজেলা ইউএনও হালিমা খাতুনের নজরে আসে। তিনি ইউএনও হিসেবে যোগদান করার পর ময়লা আবর্জনার স্তুপ পরিষ্কার ও পানি নিস্কাশন করার জন্য উদ্যোগ নেয়।কিন্তু কিছু অংশ খনন হলেও পুরো খাল খনন না হওয়াতে সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই প্রতিদিন খালে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে এবং খালের ভিতরে নতুন নতুন স্থাপনা নির্মাণ করছে প্রভাবশালীরা।
স্থানীয় সচেতন মহল অনেকে জানান,এসব খাল রাতের আধারে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী খালে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলছে এবং ঘরবাড়ি ও দোকান নির্মাণ করেছে। ফলে দিনে দিনে পানি নিষ্কাশনের খাল ও নালাগুলো অস্থিত্বহীন হয়ে পড়েছে।প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এবং উজান থেকে ভারতের পানি নেমে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।অচিরে খাল খনন ও দখল থেকে উদ্ধার করা প্রয়োজন এবং তারা ময়লা ফেলার একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণের আহবান জানানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
কুমিল্লা জার্নাল/ মোস্তাফিজ
আপনার মতামত লিখুন :