ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে মাটিবাহী ড্রাম ট্রাকচাপায় সিএনজি অটোরিকশার ৬ আরোহী নিহতের ঘটনায় ট্রাক চালক রাকিবুল হাসান রবিনকে(১৯) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বেশি উপার্জনের আশায় অতিরিক্ত ট্রিপ মারতে বেপরোয়া গতিতে ট্রাক চালাচ্ছিল ওই যুবক।
শনিবার রাতে (১৯ ফেব্রুয়ারি) কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার গলিয়ারা দক্ষিণ ইউনিয়নের মুরাপাড়া গ্রাম থেকে পালানোর সময় সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২ টায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন কুমিল্লার র‍্যাব ১১ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামি রবিন বুড়িচং উপজেলার মিরপুর গ্রামের মো. খোরশেদ আলমের ছেলে বলে জানায় এবং সড়ক দুর্ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত রবিন জানায়, সে ৫ম শ্রেণি পাস। তার পিতা একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক এবং তার চাচা একজন ড্রামট্রাক চালক। ছোটবেলা থেকেই তার বাবা এবং চাচার ড্রাইভিং করা দেখে তার মনেও ড্রাইভিং করার ইচ্ছা জাগে। এরই প্রেক্ষিতে সে তার বাবার সাথে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর মাধ্যমে ড্রাইভিং পেশা শুরু করে। ২-৩ বছর পূর্বে তার চাচার সাথে ড্রামট্রাকের হেলপারি শুরু করে। পরবর্তীতে ড্রামট্রাকের হেলপারি ছেড়ে দিয়ে তার ওস্তাদ মনিরের সাথে গাড়ি চালায়।

গ্রেফতারের পর রবিন র্যাবকে জানায়, তার কোন বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স বা কোন ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রর কোন প্রশিক্ষণ ছিল না। পরবর্তীতে সে ওস্তাদের বুদ্ধিতে অল্প টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন মালিকের ড্রাম ট্রাক চালানো শুরু করে। দুর্ঘটনার পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত রাকিবুল হাসান রবিন (১৯) তুতবাগান রাস্তার পাশে অপর একটি ড্রামট্রাকে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে মালিককে ফোন করে দুর্ঘটনার বিষয়টি জানায় । পরবর্তীতে সে ঘটনার দিন সকাল ৭ টার দিকে ময়নামতি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গোপনে কুচাইতলি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসা শেষে তার মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ থানার কনেশতলা গ্রামে আত্মগোপনে চলে যায়।

রাকিব জানায়, তার মালিক মো. আলেক ( ৫৫ ) তাকে ন্যূনতম এক বছর আত্মগোপনে থাকার পরামর্শ দিলে সে প্রথমে তার মামার বাড়ি কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার কনেশতলা গ্রাম আত্মগোপনে যায়। পরবর্তীতে রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আঁচ করতে পেরে ভয়ে অন্যত্র আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে পালানোর সময় র‍্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতারকৃত রবিন জানায় , গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৮ টায় থেকে সারারাত ড্রামট্রাকটি করে মাটি ভর্তি করে কুমিল্লা জেলার দেবপুর থেকে ঘোষনগরে সে একাধিক ট্রিপ মারে এবং প্রতিটি ট্রিপের ওপর তার অধিক কমিশন রয়েছে । অধিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সে টিপ সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতো।

ভোর ৫ টার দিকে দেবপুর থেকে ঘোষনগরের উদ্দেশ্যে মাটি বোঝাই ড্রামট্রাকটি নিয়ে সে রওনা করে। রাস্তায় অধিক কুয়াশা থাকা সত্ত্বেও চালক রাকিবুল হাসান রবিন দ্রুত ট্রিপ মারার জন্য বেপরোয়া গতিতে ড্রামট্রাকটি চালাচ্ছিল। অধিক কুয়াশা, সারারাত ক্লান্তিহীন গাড়ি চালানো ও অতিরিক্ত গতির কারণে তুতবাগান এলাকায় যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. জুলহাস মিয়াকে (৬০) দূর থেকে দেখেনি। গাড়িটির অধিক গতি থাকার কারণে কাছাকাছি এসে লক্ষ্য করলেও গাড়িটি সে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে দুর্ঘটনাটি সংঘটিত করে।

সে আরও জানায় , গাড়ি থামানোর জন্য ব্রেক করলেও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি প্রায় ৫০ ফুটের মতো সামনে চলে যায় । পরবর্তীতে সে স্থানীয় লোকজনের ভয়ে তার চালানো দুর্ঘটনা কবলিত ড্রামট্রাকটি রেখে পিছনে থাকা অন্য আরেকটি ড্রামট্রাকে উঠে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

কুমিল্লার র‍্যাব ১১ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, ঘটনার পর থেকেই দুর্ঘটনা কবলিত ড্রামট্রাকটির মালিক বুড়িচং উপজেলার মিরপুর গ্রামের বাসিন্দা আলেক আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার নিমিত্তে র‍্যাব কুমিল্লার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এর আগে শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬ টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সিন্ধুরিয়াপাড়া কাটাজাঙ্গল তুতবাগান এলাকায় মাটিবাহী ড্রাম ট্রাক চাপায় অটোরিকশার চালক-যাত্রীসহ ৫ জন নিহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান আরও একজন। পরে শুক্রবার রাতে বুড়িচং থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

[sharethis-inline-buttons]