রুবেল মজুমদার।।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী বাজারস্থ চার লেন রাস্তার ডিভাইডারের উপর রাস্তার ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে মনে হচ্ছে এ যেন মহাসড়ক নয় ময়লার ভাগার। আবর্জনার এ স্তুপ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে চারপাশ। এ মহাসড়কে প্রতিনিয়িত হাজারো যানবাহনের চলাচল করে । কিন্তু সড়কের চার লেন ডিভাইডর বা আইল্যান্ডে ময়লা আবর্জনা,মরা হাঁসমুরগী ও তাদের বিষ্টা ফেলে মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারীদের অতীষ্ঠ করে তুলছে ।
দেশের অন্যতম প্রধান একটি মহাসড়কে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে দেশের পরিবেশের সার্বিক পরিস্থিতি কি তা সহজেই অনুমেয়। এতে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি মহাসড়কের সৌর্ন্দয নষ্ট হচ্ছে। আবর্জনার স্তূপ থেকে তীব্র দুর্গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মহাসড়কে হাজারো যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীকে নাকে রুমাল চেপে চলতে হয়। এ ছাড়া নিমসার বাজারস্থলে সড়ক দখল করে আছে ময়লা-আবর্জনার বিশাল স্তূপ।বাজার কমিটি ও বাজার ইজারাদারা দায় দিচ্ছেন একে অপরকে ।
মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের গৌরীপুর,তালতলি, মাধাইয়া, চান্দিনা, নিমসার, কাবিলা, নিশ্চিন্তপুর, আমতলী, আলেখারচর, পদুয়ারবাজার, সুয়াগাজী,ছুপুয়া গরু বাজার,মিয়াবাজার,চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকায়,চিওড়া,পদুয়াবাজার, মহাসড়কের পাশে কাঁচাবাজারের ময়লা-আবর্জনা ও বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলার কারণে স্তূপ তৈরি হয়েছে। এসব স্তূপে প্রতিনিয়ত মহাসড়কের দুই পাশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা অধিকাংশ হোটেল রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য, পঁচা শাকসবজি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠাসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।
আবার কোথাও রাস্তার পিচের ওপর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এসব ময়লার ভাগাড়ে পশু-পাখি ও কুকুর-বিড়াল খাবারের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করার সময় এলোমেলো করে মহাসড়কে ছড়িয়ে ফেলছে। সড়কের ওপরের এসব ময়লা-আবর্জনা যানবাহনের চাকায় পিষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং এসব ময়লা ধুলায় পরিণত হয়ে বাতাসে উড়ছে। বিশেষ করে বাতাসে ময়লা-আবর্জনা ও বিষাক্ত ধুলা উড়ে আশপাশের বাড়িঘরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ছে। জেলার বুড়িচং উপজেলার নিমসার কাঁচাবাজার লাগোয়া দুর্গন্ধ ছড়ানো বড় ময়লার স্তূপটি এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ বলে মন্তব্য করেন বাসিন্দারা। এছাড়া একই উপজেলার নাজিরা বাজার এলাকায় মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তূপে ছোট-বড় তিনটি মরা গরু পড়ে থাকতে দেখা গেছে সম্প্রতি।
চান্দিনার নিমসা বাজারে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে শ্রমিক, কর্মচারীসহ আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। দুর্গন্ধের কারণে খুচরা ক্রেতারা আসতে চান না। দেশে বৃহত্তর কাঁচা বাজার হওয়ায় পাইকারী ক্রেতারা এখানে বেশী আসে। সড়কের মাঝখানে এসব ময়লার স্তূপটি কারনে দূরের পাইকাররা নানা রকম মন্তব্য করে।
সুয়াগাজী বাজারে ব্যবসায়ী মামুন সর্দার বলে, বাজারে মাঝখানে ডিভাইডর বা আইল্যান্ডে ময়লা আবর্জনা,মরা ময়লার স্তূপ সরানোর জন্য আমরা এলাকাবাসী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রশাসন কে অবগত করেছি।আশা করছি উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী রেজিস্ট্রার মো মোহাম্মদ মোশারাফ বলেন, বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর বুকে আর এমন রাষ্ট্র একটাও পাওয়া যাবে না,যেখানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের আইল্যান্ডকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কুমিল্লার সুয়াগাজী বাজারস্থ চার লেন রাস্তার রোড ডিভাইডর বা আইল্যান্ড। ময়লা-আবর্জনা, মরা হাঁসমুরগী ও তাদের বিষ্টা ফেলানো হয় দুই রাস্তার মধ্যবর্তী স্থানে! ময়লা গড়িয়ে রাস্তায় পড়ে অনেক দূর চলে যায়। ঘটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়। অথচ এগুলো দেখভাল করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, সওজ, হাইওয়ে পুলিশ ইত্যাদি কর্তৃপক্ষ আছে। অথচ এগুলো তারা দেখে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক শাহাজাদা এমরান বলেন, মহাসড়কের উপর ময়লার ভাগাড় এটা কোন সভ্য সমাজে দেখা যাবে না। আমরা নাগরিক হিসেবে যে কতটা সভ্য তা শুয়াগাজীর বাজার সংলগ্ন মহাসড়কের আইল্যান্ডের মাঝখানের অবস্থাটি দেখলেই অনুমান করা যায়। শুধু নাগরিকদের দোষ দিলেই হবে না। এই মহাসড়কটি দেখভাল করার জন্য নিশ্চয়ই একটি অথরিটি আছে। এই অথরিটির কাজটি কি। সবার আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে এই ব্যাপারে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। মহাসড়কের আইল্যান্ডগুলোর মাঝখানে ফুলের বাগান বা সৌন্দর্যবর্ধনের গাছ লাগানোর কথা । কিন্তু এখানে কিভাবে ডাষ্টবিন হলো তা তাদের জবাব দিতে হবে। আমাদের সামগ্রিক পরিবেশের জন্য এবং গণস্বাস্থ্যের জন্য এটা বিশাল এক হুমকি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে দ্রুত মহাসড়ক থেকে ময়লা আবর্জনা সরাতে হবে।
কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা.মীর মোবারক হোসেন বলেন,‘ময়লা-আবর্জনা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন ও সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।’ ‘ময়লা-আবর্জনার কারনেই মশার বংশবিস্তারের করে। গৃহস্থালি বর্জ্যের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ হাসপাতাল বর্জ্যও একই সঙ্গে ফেলা হচ্ছে। এগুলো সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশে সংক্রামক ও ক্ষতিকর বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। এর ফলে ছড়িয়ে পড়ছে হেপাটাইটিস ‘বি’, হেপাটাইটিস ‘সি’, যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়ার মতো রোগ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুমিল্লার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ভূঁঞা বলেন ‘মহাসড়কের পাশে ময়লা না ফেলার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বাজার কমিটি ও প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে অবগত করেছি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সম্বনয়ক কমিটিতে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা শিগিগর কঠোর ব্যবস্থা নেব। ময়লা সরাতে ও এখানে যাতে ময়লা না ফেলা হয় সেজন্য র্বজ্য বিভাগকে জানিয়েছি।
আপনার মতামত লিখুন :