তাজি কা নাম রাহেগা’, ‘লতাজি অমর রহে’—গতকাল মুম্বাইয়ের আকাশে বাতাস গুজরে উঠেছিল ‘লতা–বন্দনায়’। উপমহাদেশের সুরসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর চিরকাল অমর হয়ে থাকবেন তাঁর গায়কির মধ্য দিয়ে। গতকাল মুম্বাইয়ের শিবাজি পার্কে শেষকৃত্য সম্পন্ন হলো ভারতের ‘কোকিলকণ্ঠী’র। তাঁর মহান প্রয়াণে শোকস্তব্ধ পুরো দুনিয়া।
প্রভুকুঞ্জের সামনে সকাল থেকে লোকে লোকারণ্য। এখানেই বসবাস করতেন সংগীতদুনিয়ার ‘দেবী’। ৯ থেকে ৯০—পথের ধারে অনেকে ভিড় করেছিল তাঁকে শেষ দেখা দেখতে। এদিন প্রভুকুঞ্জের আশপাশে ছিল মুম্বাই পুলিশের কঠোর নিরাপত্তা। দেশ–বিদেশের গণমাধ্যম ভিড় করেছিল প্রভুকুঞ্জের সামনে। বেলা একটা নাগাদ ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতাল থেকে প্রভুকুঞ্জে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে আসা হয় লতা মঙ্গেশকরের পার্থিব শরীর। এই ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ২৭ দিন ধরে জীবনের সঙ্গে চরম লড়াই করেছিলেন তিনি। অবশেষে জীবনযুদ্ধের কাছে হার মানেন বরেণ্য এই সংগীতসাধক।
রোববার সকাল ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন সবার আদরের লতা দিদি। এদিন দুপুরে মহান এই সংগীতশিল্পীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রভুকুঞ্জে ছুটে গিয়েছিলেন বলিউড মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন, জাভেদ আখতার, শ্বেতা বচ্চন নন্দা, সঞ্জয় লীলা বানসালি, মধুর ভান্ডারকর, আশুতোষ গোয়াড়িকর, ঊর্মিলা মাতন্ডকর, শ্রদ্ধা কাপুর, ভাগ্যশ্রী, জাভেদ আলী, যতীন পণ্ডিতসহ অনেকে। এ ছাড়া রাজনীতির জগতের অনেকে এসেছিলেন এদিন প্রভুকুঞ্জে। লতা মঙ্গেশকরের বাসার সামনে তাঁকে ভারতের জাতীয় পতাকায় ঢেকে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। এরপর প্রবাদপ্রতিম এই সংগীতশিল্পীর পার্থিব শরীর সাদা ফুলে সজ্জিত গাড়িতে করে শিবাজি পার্কের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন ঘড়িতে সময় প্রায় ৪টা ৩০ মিনিট।
করোনার ভ্রুকুটিকে অগ্রাহ্য করে পথের দুই পাশে শুধুই ছিল মানুষের ভিড়। সারা শহর এদিন কেঁদে উঠেছিল মহান এই সংগীতশিল্পীর চিরবিদায়কালে।
সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিট নাগাদ লতার শেষকৃত্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং মোদি দিল্লি থেকে ছুটে এসেছিলেন সুরসম্রাজ্ঞীকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, শারদ পাওয়ার, দেবেন্দ্র ফাডনবিশ, রাজ ঠাকরে, আদিত্য ঠাকরেসহ রাজনীতিমহলের অনেকে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শিবাজি পার্কে হাজির ছিলেন গতকাল সন্ধ্যায়। এদিকে বিনোদনজগৎ থেকে শাহরুখ খান, রণবীর কাপুর, শ্বেতা বচ্চন নন্দা, বিদ্যা বালান, সিদ্ধার্থ রায় কাপুর, কৈলাশ খের, অনুরাধা পাড়োয়াল, আশুতোষ গোয়াড়িকর, জাভেদ আখতার, মধুর ভান্ডারকরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার সস্ত্রীক শেষকৃত্যের সময় উপস্থিত ছিলেন। শাহরুখ খান তাঁর ব্যবস্থাপক পূজা দাদলানির সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
তবে সাধারণ মানুষ যাতে সংগীতদুনিয়ার দেবীকে শেষ দর্শন করতে পারেন, তার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ প্রশাসন। কিংবদন্তিতুল্য গায়িকাকে গতকাল সন্ধ্যায় শেষ দেখা দেখতে শিবাজি পার্কে হাজির ছিলেন বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ। ৭ বছরের আমিনা থেকে ৯০ বছরের রামানুজ তিওয়ারি ছুটে এসেছিলেন শুধু এই মহান গায়িকাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। লতা মঙ্গেশকরের ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর তাঁর মুখাগ্নি করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। একদিকে চিতা জ্বলছে আর অন্যদিকে কালজয়ী গান অবিরাম বেজে চলছিল। সুরসম্রাজ্ঞীর সুরের ঝংকারে মুখর ছিল শিবাজি পার্কের আনাচকানাচ। এই বিষাদময় সন্ধিক্ষণে সবাই গুনগুন করে গেয়ে উঠেছিল, ‘ভালোবাসার আগুন জ্বেলে কেন চলে যায়…’।
আপনার মতামত লিখুন :