• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৯ নভেম্বর, ২০২৩
সর্বশেষ আপডেট : ৯ নভেম্বর, ২০২৩
Designed by Nagorikit.com

কুমিল্লায় নারী উদ্যোক্তা মিলনমেলায় আয়োজকদের শত অনিয়ম

কুমিল্লা জার্নাল
[sharethis-inline-buttons]

অনুসন্ধান রিপোর্ট।।
কুমিল্লায় ৩০০ জন নারী উদ্যোক্তাকে নিয়ে গালা ফিয়েস্তা বা গেট টুগেদার বা মিলনমেলার অর্থ আত্মসাৎসহ বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে আয়োজকদের বিরুদ্ধে।

ওই মিলনমেলায় অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা নাম না প্রকাশের শর্তে অনুষ্ঠানের জন্য সংগ্রহ করা অর্থ আত্মসাৎ, অংশগ্রহণকারীদের সঠিক আপ্যায়ন না করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্যসহ বেশ কিছু অভিযোগের কথা জানিয়েছেন।

এসব বিষয় নিয়ে বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তা তাদের নিজস্ব ফেসবুকে পোস্টও দিয়েছেন। সেসব পোস্টে আয়োজকদের বেশ সমালোচনাসহ, দারুণ ক্ষোভ প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তারা।

গত শনিবার (৪ নভেম্বর) কুমিল্লার নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। যার নাম দেওয়া হয় ‘গালা ফিয়েস্তা ২০২৩’। নারী উদ্যোক্তাদের ফেসবুকভিত্তিক ৪টি গ্রুপ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। গ্রুপগুলো হলো- গার্লস স্মাইল, নীলাঞ্জনা, উইমেন অব উইসডম এবং পার্ল প্যালেস ফ্যান গ্রুপ। এতে অংশগ্রহণের জন্য কুমিল্লার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৩০০জন নারী উদ্যোক্তা রেজিস্ট্রেশন করেন। অনুষ্ঠানের হাল হাকিকত দেখে ৫০ জনের মতো বাসায় ফিরে চলে যান।

অনুষ্ঠানের আগে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে আসেন আয়োজকদের একজন নীলাঞ্জনা গ্রুপের এডমিন তিশা। ওই লাইভে তিনি বস্তা ভরে গিফট আনবেন বলে ঘোষণা দেন। তার ওই লাইভটি নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা হয়। ফলে, নারী উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বাড়ে। তার কথায় আন্দোলিত হয়ে নারী উদ্যোক্তা অনুষ্ঠানের রেজিস্ট্রেশন করেন।

জানা গেছে, প্রায় ৩০০ জন নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে মিলনমেলার জন্য ৭২০ টাকা করে ফি আদায় করা হয় রেজিস্ট্রেশনের নামে। এসব টাকার মধ্যে নানান অনুষ্ঠান, নাচ-গান, র‍্যাফেল ড্র, সেরা উদ্যোক্তাদের মাঝে সম্মাননা প্রদান, দুপুরের খাবারসহ বেশ কিছু আয়োজনের কথা বলা হয়। কিন্তু কোনোরকম দায়সারাভাবে অনুষ্ঠান শেষ করে আদায়কৃত অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন আয়োজকরা, এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্রের হিসেব অনুযায়ী,প্রায় ৩০০জন নারী উদ্যোক্তার কাছ থেকে ৭২০টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ মোট ২ লাখ ১০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। এছাড়াও পাওয়ার্ড এবং স্পনসর
৩০ হাজার, একই প্রতিষ্ঠানের কুইজ গিফট স্বর্ণ বাবদ ৩০ হাজার, একজন নারী উদ্যোক্তা ৫০ হাজার। কো-পাওয়ার্ড বাই :
দুটি পার্লার স্পন্সর একটি ১৫ হাজার অপর পার্লার ১০ হাজার। একটি জুয়েলারি শপ থেকে স্পনসর ২০ জোড়া গোল্ড প্লেটেড কানের জিনিস। একটি ড্রেস শো-রুম থেকে স্পন্সর ১০ হাজার। একটি বাইক কোম্পানি থেকে ১৫ হাজার। তিনজন নারী উদ্যোক্তা থেকে ১৫ হাজার টাকা থ্রি পিছ।

গোল্ডেন স্পন্সর ১১ জন ৫০০০ করে ৫৫ হাজার, সিলভার স্পন্সর ১০জন ৩০০০ করে ৩০ হাজার, প্লাটিনাম স্পন্সর ১ জন ১০ হাজার।

বিউটি পার্লারের র‍্যাম্প শো ১২ জনের মোট ৩৬ হাজার,সহ আরও বিভিন্ন স্পন্সর বাবদ টাকা এবং গিফট নিয়েছেন।
আয়োজকরা এসব টাকার সিংহভাগ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। এ অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল র‍্যাফেল ড্র। যা লাইভে পুরস্কার হিসেবে ঘোষণা করেন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের অত্যাধুনিক স্কুটি। কিন্তু সেটাই দেওয়া হয়নি র‍্যাফেল ড্র’তে।

অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে অবস্থিত গ্র্যান্ড দেশপ্রিয় রেস্টুরেন্টের হলরুমে। এতে হলরুমের কোনো ভাড়া দিতে হয়নি। শুধু জনপ্রতি ২৬৫টাকা খাবার বিল বাবদ মোট ২৫০ জনের খাবার বিল পরিশোধ করা হয়। সার্ভিস ফিসহ মোট ৮১ হাজার ৬৭০টাকা পরিশোধ করা হয় গ্যান্ড দেশপ্রিয় রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টটির পরিচালক পিংকু চন্দ্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বাড়ানো এলইডি স্ক্রিন ভাড়া ১৮ হাজার টাকা, অনুষ্ঠানে ছবি ও ভিডিও ধারণের জন্য ক্যামেরা ভাড়া ১৭ হাজার টাকা,ইভেন্ট ও সাউন্ড বাবদ ৬৩ হাজার। এছাড়া আয়োজক কমিটির কোনো খরচ নেই বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

অনুষ্ঠানে স্পন্সর ও কয়জন উদ্যোক্তা কে ক্রেস্ট প্রদান করা। ১০০ পাউন্ডের কেক কাটা হয়, যা স্পন্সর হিসেবে গিফট পাওয়া হয়। এছাড়াও র‍্যাফেল ড্র এর সকল পুরস্কারও স্পন্সর হিসেবে পাওয়া হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে। এসব ছাড়াও স্পন্সর করা হয় পিঠা এবং ডাবের পুডিং। অংশগ্রহণকারীদের কমন গিফট হিসেবে দেওয়া ‘মগ’ও স্পন্সর হিসেবে পায় আয়োজকরা।

তবে খাবারেও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। কেউ কেউ লিখেছেন, ৭২০ টাকা দিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম, আর হিন্দি গানে নিত্য দেখে চলে আসলাম। কথা ছিল বোমা ফুটাবেন, কিন্তু বাজিও ফুটল না, বেলুনও ফাটলো না, শুধু একটা সান্ত্বনা ( মগ)পুরস্কার এক টাকার শপিং ব্যাগে নিয়ে বাসায়, ফিরেছি।

একজন লিখেছেন, বাধ্য হয়ে মেয়েটার জন্য একটু কেক নিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু কথাগুলো এখনও কানে বাজে। অপর একজন লিখেছেন, ১০০ পাউন্ডর কেক খেতে ৭০০-৮০০ মানুষ লাগে সেখানে সবমিলিয়ে ছিল ২৫০-৩০০ জন। তাহলে এত্তগুলা কেকে কোথায় গেলো? কেন বাচ্চারা পেলো না? এটা আমাদের জন্য দারুণ লজ্জার। বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীই আয়োজকদের কাছ থেকে নূন্যতম সম্মান পাননি বলেও ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। কেউ কেউ আবার সেসব পোস্টের কমেন্টে জানিয়েছেন নিজেদের ক্ষোভ।

অংশগ্রহণকারীদের অভিযোগ, আদায়কৃত অর্থ খরচ না করেই, সব টাকা আত্মসাৎ করেছেন আয়োজকরা। তারা কিছুদিন পর পর অনুষ্ঠানের নাম করে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বলে জানান অংশগ্রহণকারীরা।

অপরদিকে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তাদের শেখার জন্য কিছু না রাখায় বেশ হতাশ তারা। নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা বলেন, যদি স্পন্সর দিয়েই অনুষ্ঠান শেষ করা যায়, তবে রেজিস্ট্রেশন ফি কেন নেওয়া হলো? আমরা আশা করেছিলাম আমাদের শেখার জন্য কিছু ইভেন্ট রাখা হবে। কিন্তু সেসবের কিছুই করা হয়নি।

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন