সাম্প্রতিক ভারত সফরের বিষয়ে মঙ্গলবার সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
“যত ছোট হোক, এটা আমাদের সার্বভৌম দেশ। সেই সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে ভারতকে রেলযোগে সরাসরি নিজেদের পণ্য পরিবহনের সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিভিন্ন মহলে যে সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলোর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি প্রশ্ন করেন, “একটা দেশের সঙ্গে আরেকটা দেশের ট্রানজিট দিলেই-বা ক্ষতিটা কী?”
“ইউরোপের দিকে তাকান। সেখানে কোনও বর্ডার নেই। তাহলে কি এক দেশ আরেক দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? তাহলে সাউথ এশিয়ায় আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো?”
দেশের মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই ভারতের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
“(ভারতের সঙ্গে) রেল যেগুলো এতদিন বন্ধ ছিলো, সেগুলো আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছি। তাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে,” তিনি বলেন।
“এই যে আমরা সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে আমাদের দেশের মানুষ।”
“তারা চিকিৎসা, পড়াশোনার জন্যই যায় বা অন্যান্য কাজে যায়, হাটবাজার করতে যায় … আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র তো আরও উন্মুক্ত হবে,” সাংবাদিকদের বলেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।
এ সময় শেখ হাসিনা এটাও বলেন যে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি দেশকে বিক্রি করেন না।
“আমি সব সময় দেশের স্বার্থ রক্ষা করে চলি। শেখ হাসিনা এ দেশকে বিক্রি করে না। কারণ আমরা এ দেশ স্বাধীন করেছি,” গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“যারা এটা (দেশ বিক্রির কথা) বলে তাদের মাথাই ভারতের কাছে বিক্রি করা।”
“সামরিক শাসক জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছিল, আর ভেতর দিয়ে তাদের পা ধরে বসে ছিলো। এগুলো আমাদের নিজের দেখা ও জানা।”
প্রসঙ্গতঃ ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা সম্প্রতি ১০টি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে। সেগুলোর একটি হচ্ছে রেল ট্রানজিট।
এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড ব্যবহার করে রেলযোগে দেশের এক অংশ থেকে আরেক অংশে সরাসরি নিজেদের পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে ভারত।
মূলতঃ এই রেল ট্রানজিটের খবর প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়।
এবারের ভারত সফরে দু’দেশের সীমান্তে আরও সাতটি হাট বা বাজার বসানোর বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিস্তার পানি বণ্টন সংকট সমাধানে ভারত, নাকি চীনের সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
“চীনও একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করেছে, ভারতও একটা করবে। আমাদের কাছে যেটা সবথেকে বেশি গ্রহণযোগ্য, লাভজনক, আমরা সেটাই করব,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন শেখ হাসিনা।
তবে পানি বণ্টনের সঙ্গে যেহেতু ভারত জড়িত এবং দেশটি যেহেতু প্রকল্পে সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে, সে কারণে ভারতের সঙ্গে কাজটি করতে পারলে ভালো হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
“ভারত যখন এগিয়ে আসছে, আমরা যদি এটা করি, তাহলে পানি নিয়ে আর প্রতিদিন প্যাঁ প্যাঁ করতে হবে না।”
“ভারত যদি আমাদের তিস্তা প্রজেক্টটা করে দেয়, তাহলে আমাদের সব সমস্যারই তো সমাধান হয়ে গেল। তো সেটাই আমার জন্য সহজ হল না?,” সাংবাদিকদের বলেন শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে, তিস্তা চুক্তি ও গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যে চিঠি দিয়েছেন, তা ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ’ ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি যদি নবায়ন না–ও হয়, তবু এ চুক্তি অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গতঃ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শনিবার ২২শে জুন ১০টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশের দিকে তিস্তার পানি সংরক্ষণ ও পরিচালন পদ্ধতি উন্নয়নের জন্য শিগগিরই একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে যাবে।
এদিকে, গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নিজের আপত্তির কথা তুলে ধরেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আপনার মতামত লিখুন :