আজ তাহলে ‘নকআউট’ ম্যাচ! এই বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল-ফাইনালের আগে নকআউট বলতে কিছু নেই। তারপরও নকআউটই। হারলেই যখন বিদায়—নকআউট নয় তো কী!
‘বিদায়’ মানে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া নয়। আবার ‘শেষ’ হয়ে যাওয়াও। দুই রকমই হয় কীভাবে! ব্যাখ্যা করার কি আসলেই প্রয়োজন আছে? আপনারও এটা অজানা থাকার কথা নয়, ভারতের কাছে হেরে গেলেও বাংলাদেশের আরও একটা ম্যাচ থাকবে। তবে আফগানিস্তানের সঙ্গে সেই ম্যাচটা তখন রূপ নেবে শুধুই একটা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির। বিশ্বকাপের আয়নায় যেটির কোনো ছায়াই পড়বে না।
তাসকিন আহমেদ এখনো স্বপ্ন দেখছেন। বাকি দুই ম্যাচ জিতলে সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। একটু আগে শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে বৃষ্টি এমন ঝামেলা করেছে বলেই হয়তো একটা পাদটীকা দেওয়াও জরুরি মনে করলেন। বৃষ্টি যদি ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ হতে না দেয়, তাতেও একটা সুযোগ থাকবে।
বাকি দুই ম্যাচ জিতলে সুযোগ তো থাকবেই। কিন্তু এই ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ জিতবে কীভাবে! কেন, গ্রুপের চার ম্যাচের তিনটিতেই যেভাবে জিতেছে। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগেই চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এই বিশ্বকাপে প্রায় সব দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের সংগ্রামের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। বোলাররাই বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন, এটা মেনে নিয়ে দিয়েছেন অমর এক বাণী। ক্রিকেট ম্যাচে জিততে ১ রান বেশি করলেই চলে।
কিন্তু সেই রানটা ১৭০-১৮০ হলেই যে বাংলাদেশের বিষম সমস্যা! রানখরার এই বিশ্বকাপে অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম একটু ব্যতিক্রম। এই মাঠের গড় স্কোরের কথা বলবেন তো? যা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের স্কোরের কাছাকাছিই। ওটা ভুলে যান, এই বিশ্বকাপে নর্থ সাউন্ডের চেয়ে বেশি রান হয়েছে আর একটি মাঠেই।
কোনোমতে ১৩০-১৪০ করলাম আর বোলাররা জিতিয়ে দিল—এখানে তা হওয়ার নয়। এখানে জিততে হলে রান করতে হবে। আর রান করতে হলে খেলতে হবে মন খুলে। ভয়ডর পাশের ক্যারিবিয়ান সাগরে ছুড়ে ফেলে।
তাওহিদ হৃদয় ছাড়া আর কারও ব্যাটেই যে সেই ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের কোনো চিহ্ন নেই। সব ম্যাচে রান করেননি। তবে যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, টি-টোয়েন্টির মেজাজ ফুটে বেরিয়েছে শুধু তাঁর ব্যাট থেকেই। শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা ধরলে প্রথম চার ম্যাচে ব্যর্থতার প্রতিমূর্তি অধিনায়কের ব্যাটেও এদিন শুরু থেকেই ইতিবাচকতার বার্তা। প্রথম পাঁচ বলে কাঁপিয়ে দেওয়া মিচেল স্টার্কের শেষ বলে স্কয়ার ড্রাইভে চার আর হ্যাজলউডকে লং অনের বাইরে উড়িয়ে ফেলাটায় ছিল ফিরে আসার বার্তা। লিটন জবুথবু হয়ে থাকলেও পার্টনারশিপ একটা দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। ভালো একটা স্কোরের ভিত্তিও।
কিন্তু বাংলাদেশের সমস্যা তো শুধু টপ অর্ডারে নয়। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় আড়ালে চলে গেলেও পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পর সম্ভবত আরও বেশি। এদিনও দেখতে না দেখতেই বাংলাদেশের ব্যাটিং তাসের ঘর। অ্যাডাম জাম্পা অনেক দিনই এই সময়টাতে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হয়ে আছেন। সেট হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান লিটন আর নাজমুলকে তুলে নিয়ে এদিনও কাজের কাজটা তিনিই করেছেন।
নাজমুল দায় নিচ্ছেন নিজের ওপরই। ওই সময়ে আউট না হয়ে অন্তত যদি ১৭ ওভার পর্যন্ত খেলতে পারতেন, তাহলেই হয়তো স্কোরটা ১৭০ হয়ে যায়। তা নাজমুল না হয় পারেননি, দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান কী করলেন!
সাকিব আল হাসান তাঁর আউটের রিপ্লে অবশ্যই দেখে থাকবেন। যা দেখে অন্য সবার মতো তাঁরও অবিশ্বাসে চোখ বড় হয়ে যাওয়ার কথা। কোথায় মাথা, কোথায় পা, কোথায় ব্যাট—অদ্ভুত এক শট! ইদানীং চাপা পড়ে যাওয়া চোখের সমস্যা ছাড়া ওই ত্রিভঙ্গমুরারী সাকিবের আর কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো নয়ই, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও এর আগে কোনো দিন হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাননি প্যাট কামিন্স। একটা হ্যাটট্রিকের কথাই মনে করতে পারেন। সেটি ১৭ বছর বয়সে গ্রেড ক্রিকেটে। সেই হ্যাটট্রিক বলটার কথা বলতে বলতে নিজেই খুব হাসলেন—স্লো ফুলটস হয়ে গিয়েছিল। ব্যাটসম্যান ডাক করেছে, আর বল গিয়ে লেগেছে স্টাম্পে।
আপনার মতামত লিখুন :