
জার্নাল ডেস্ক : নিজাম উদ্দিন। একমাস আগে মালোশিয়া থেকে ছুটিতে আসেন বাড়িতে, নতুন ঘরের নির্মাণের কাজ শুরু করেন । প্রবাসে থাকাকালীন দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল বাড়িতে গিয়ে নতুন ঘরের কাজ করবে। কাজ ওহ প্রায় শেষদিকে। এ শুক্রবার উঠার কথা ছিল তার ঘরে,তাই এলাকার মুরব্বিদের সাথে কথা ছিল,ঘরে ওঠার আগে তাদের দাওয়াত দিয়ে তারপরেই উঠবেন ঘরে। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি! ঘুমাতে পারেননি নিজামের স্বপ্নের নতুর ঘরে।
সোমবার, ২৪ অক্টোবর রাত ১০ টায় নিজাম উদ্দিন তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী (২২) ও চার বছরের কন্যাশিশু নুসরাতকে নিয়ে রাতের খাওয়া শেষে পুরাতন টিনের ঘরে ঘুমাচ্ছেন। হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ঘরের উপরে গাছ পড়লে প্রানহানি ঘটে নিজামসহ তার স্ত্রী ও কণ্যার।নিজাম উদ্দিন নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়নের হেসাখাল ( খামার পাড়) গ্রামের আব্দুল রশিদের ছেলে।
নিজাম উদ্দিনের ভাই জামাল উদ্দিন জানান, মাত্র এক মাস আগেই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেন নেজাম উদ্দিন। স্ত্রী কন্যাকেনতুন ঘরে তুলে দিয়ে আগামী মাসেই আবার ফিরে যাবার কথা ছিলো তার। সোমবার রাতে ঝড় শুরু হওয়ায় নাজিম দ্রুত বাড়ি ফিরে স্ত্রী কন্যার সাথে ঘুমিয়েছিলেন। আচমকা ঘরের পাশের বিশাল গাছটি উপড়ে পরে চাপা দেয় ঘরটিকে। এতে তারা তিনজনই মারা যান।
হেসাখাল ইউপি চেয়ারম্যান ইকবার বাহার মজুমদার জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার স্বচ্ছল এই পরিবারটির প্রতি সমবেদনা জানানো ছাড়া কিছুই করার নেই। তিনি জানান, ঝড়ে তিনজনের মৃত্যু ছাড়াও সিত্রাংয়ের প্রভাবে নাঙ্গলকোট উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গাছ উপড়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। রাত সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত কুমিল্লা অতিক্রম করা কালে এই ঘূর্ণিঝড় ক্ষয়ক্ষতি করেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও স্থাপনার।
হেসাখাল এলাকার বাসিন্দা জহিরুল বলেন, নিহত নিজাম উদ্দিন দীর্ঘদিন মালোশিয়া প্রবাসী ছিলেন।কিছু আগেই দেশে এসে নতুন বিল্ডিং ঘর করেছে ২২০০ বর্গফুটের,ছেলেটা ছোট বেলা থেকে পরিশ্রমী ছিল,বাবা- মায়ের ইচ্ছা পূরনের দীর্ঘ দিন পর দেশে এসে বিল্ডিং কাজ শুরু করেন। তার ও পরিবার এভাবে মারা যাবে আমরা চিন্তা করতে পারিনি। পুরো একালায় এখন শোকাহত।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হেসাখাল এলাকায় ঝড়ে গাছ পড়ে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের মাতম বইছে। নিহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠেছে সেখানকার পরিবেশ।
মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালে হেসাখাল গ্রামের খামার পাড়ায় গিয়ে চোখে পড়ে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। একই পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে বিহ্বল স্বজনেরা বারবার মোর্ছা যাচ্ছেন। তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন প্রতিবেশীরা। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মানুষজন ছুটে আসছেন নিজাম উদ্দিনের বাড়িতে। স্বজনদের কান্নায় তাদের চোখও ছলছল করে ওঠে।
এ বিষয় নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান মেহেবুব বলেন,গতরারে নিজামসহ তার পরিবারের সদস্যদের উপর ঘরে বড় গাছে ভেঙে পড়ে। এতে নিজাম ওহ তার স্ত্রী ও কণ্যা গুরুতর আহত হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে নিহত প্রতিজনকে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১৫ হাজার টাকা দাফন সম্পন্ন জন্য সহযোগিতা করছি। এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার থেকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে যেকোনো ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে খবর নেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নিহত নিজামের পরিবারের প্রতি আমরা শোকাহত।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করা হবে পরিবারটিকে।
[sharethis-inline-buttons]
আপনার মতামত লিখুন :