মুহা. ফখরুদ্দীন ইমন, চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি।
বিভিন্ন মানুষ নিকট থেকে ব্যবসায় ‘অংশীদারিত্ব’ দেয়ার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে আতিকুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। পাওনা টাকা চাইলে আতিকুর রহমান উল্টো পাওনাদারদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদেরকে হয়রানী করছেন বলে জানা গেছে। এর প্রতিবাদে ও আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে প্রতারক আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। আতিকুর রহমান পৌর এলাকার গোমারবাড়ি গ্রামের মৃত আবদুর রহমানের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকালে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ক্ষতিগ্রস্ত সফিউল ইসলাম জিয়া উল্লেখ করেন, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গত ৫ বছর ধরে আতিকুর রহমানের সাথে ইনভেনশন ফ্যাশন হাউজ ও পাঞ্জাবী ওয়ার্ল্ড নামে দু’টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান গত আগস্ট মাসে পাঞ্জাবী ওয়ার্ল্ড চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার শাখার মালিকপক্ষের সাথে চুক্তিপত্র বাতিল করে। পরে দোকানের সকল মালামাল আতিকুর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবেল মাহমুদ নিয়ে যায়।
সফিউল ইসলামের বিনিয়োগকৃত ৩০ লক্ষ ৯০ টাকা আগস্ট মাসের ১ম সপ্তাহে পরিশোধ করবে মর্মে ইসলামী ব্যাংক ফেনী শাখার একটি চেক প্রদান করে। পরবর্তীতে আতিক ও রুবেল সফিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয় এবং টাকা না দিয়ে উল্টো সফিউল ইসলামের বয়োবৃদ্ধ বাবা ও স্ত্রীকে ফোনে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দেয়া শুরু করে। সফিউল ইসলাম বিষয়টি চৌদ্দগ্রামের কয়েকজন সামাজিক ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করে। এরই প্রেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর আতিকই চৌদ্দগ্রামের স্থানীয় কিছু সামাজিক নেতৃবৃন্দ নিয়ে ফেনীস্থ ইনভেনশন ফ্যাশন হাউজ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অফিসে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। দীর্ঘক্ষণ বৈঠক হলেও আতিক ও রুবেল মাহমুদ সামাজিক ব্যক্তিবর্গের সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হয়নি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জয়নাল পাটোয়ারী, বেলাল হোসাইন, নাজমুল হক বাবর, মু. শাহাব উদ্দিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সামাজিক নেতৃবৃন্দ। বৈঠকের সিদ্ধান্ত না মেনে আতিক ও রুবেল মাহমুদ সফিউল ইসলামকে হুমকি দিয়ে বলে ‘তোমাকে কোন টাকাই দিবো না’। ওই সময় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাৎক্ষণিক সফিউল ইসলাম ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। সফিউল ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য পরদিন ফেনী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকায় ১৩ অক্টোবর ব্যাংক আতিকুর রহমান কর্তৃক প্রদানকৃত চেকটি ডিজওনার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এরপরে ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম জর্জকোর্ট থেকে ১৭ অক্টোবর আতিকের গ্রামের ঠিকানা ও ফেনীস্থ পাঞ্জাবী ওয়ার্ল্ডে উকিল নোটিশ পাঠায়। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে আতিকুর রহমান ব্যবসায়ের অংশীদার সফিউল ইসলাম ও তার ছোট ভাই চট্টগ্রামের মহসিন কলেজের ছাত্র নাইমুল ইসলামের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন’।
আতিকুর রহমানকে প্রতারক ও মামলাবাজ উল্লেখ করে সফিউল ইসলাম আরও বলেন, ‘আতিকুর রহমান চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ওমর ফারুক স্বপন, মমতাজ উদ্দিন শামীম, মফিজুর রহমান, জোবায়ের হোসেন মাসুম, মো: ওয়ালী উল্লাহ, মাহবুবুল হকসহ আরও বেশ কয়েকজন থেকে ব্যবসায় অংশীদারিত্ব দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আতিকুর রহমান ব্যবসায়ে অংশীদারীত্বের কথা বলে সাধারণ মানুষ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে। এ ভুক্তভোগীরা টাকা চাইলে তাদেরকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে জানা গেছে। এ সকল টাকা দিয়ে তিনি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ফ্ল্যাট নিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করে আসছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আতিকুর রহমান বলেন, ‘সফিউল ইসলাম আমার ব্যবসায়ের অংশীদার ছিলেন না। সে ইনভেশন ফ্যাশন হাউজের একজন কর্মচারি ছিলেন। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল চুরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ১৯ লক্ষ টাকার একটি মামলা চলমান রয়েছে’।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সানমার এর দোকান মালিক জসিম উদ্দীন বলেন, ‘আতিক আমার দোকানের ভাড়াটিয়া ছিলো। তার সাথে গত আগস্ট মাসে দোকানের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। এর আগেই আমি দোকানটি অন্যত্র বিক্রি করে দেই। শুনেছি সে নতুন মালিকের সাথে চুক্তি নবায়ন না করে মালামাল সরিয়ে নিয়ে গেছে এবং চুক্তির টাকা ফেরত নিয়ে গেছে’।
[sharethis-inline-buttons]
আপনার মতামত লিখুন :